সবাই আমরা ভালো থাকতে চাই। তার জন্য যা যা উপায় অবলম্বন করা যায় সেগুলো সবটাই চেষ্টা করি। তাও যদি কেউ জিজ্ঞেস করে “কেমন আছো?”, আমরা বলি “এই চলে যাচ্ছে”; ‘ভালো আছি’ কথাটা সহজে কিন্তু বলতে পারি না। কোথাও যেন একটা দ্বন্দ্ব বা সংশয় কাজ করে; কি যেন একটা নেই, কোথাও যেন একটা শূণ্যতা রয়েছে। সবার আগে দেখতে হবে ভালো থাকা বলতে আমরা কি বুঝি? শারীরিক না মানসিক না সামাজিক না অর্থনৈতিক না কি সমগ্র দিক দিয়ে ভালো থাকা। সব দিক দিয়ে ভালো থাকা ব্যাপারটা খানিকটা রূপকথার মতো শোনায়। কোথাও না কোথাও সমস্যা থাকতেই পারে। এবার সেই দিকটাকে গুরুত্ব দিয়ে বলবো “ভালো নেই” না কি বাকি যে দিকগুলোতে সব ভালো হচ্ছে সেটা বিচার করে বলবো “ভালো আছি” – এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে। ভালো থাকাটা খানিকটা অভ্যাসের মত। কেউ যদি মনে করে সে ভালো আছে তাহলে সে ভালো আছে; আবার কেউ যদি মনে করে সে ভালো নেই তো সে ভালো নেই। সকালে ঘুম থেকে উঠে কেউ যদি ভাবে “আমি আজকের সকাল দেখতে পাচ্ছি, আমি ভাগ্যবান”; তার জীবনে যত সমস্যাই আসুক না কেন সে সব হাসিমুখে মেনে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করবে এবং সবসময় ভাববে সে ভালো আছে। অন্যদিকে, সকালে উঠে কেউ যদি ভাবে “আবার সকাল হলো, হাজারটা সমস্যা শুরু হলো”; তাহলে সামান্য ছোট ব্যাপারেই তার মনে হবে একমাত্র তার জীবনেই সব সমস্যা; শুধু সেই ভালো নেই; বাকি সবাই খুব ভালো আছে। তাই ভালো থাকার অনুভূতিটা অত্যন্ত ব্যক্তিগত। জীবন ভালো খারাপ মিশিয়ে চলে। যখন কিছু ভালো হয় তখন আমরা জিজ্ঞাসা করি না “আমার সাথে এটা কেন হলো?”; কিন্তু যদি কিছু খারাপ হয় তাহলে এই প্রশ্ন অবশ্যম্ভাবী। মানুষ সবসময় সেটাই দেখে যা তার কাছে নেই; যেটা আছে সেটা দেখে না। কেউ যদি স্কুটার থাকা সত্ত্বেও গাড়ি কিনতে পারছে না বলে দুঃখ করে, অন্য কেউ সাইকেলে বসে প্রথম ব্যক্তির কাছে থাকা স্কুটার দেখে সেটা কিনতে না পারার জন্য দুঃখ করছে। আবার আরেকজন হেঁটে যেতে যেতে দ্বিতীয় ব্যক্তির কাছে থাকা সাইকেল দেখে দুঃখ করছে। আবার একজন মানুষ হুইলচেয়ারে বসে হেঁটে যাওয়া মানুষ টা কে দেখে দুঃখ করছে কারণ সে হাঁটতে পারছে না। তাই আমাদের কাছে যা আছে সেটার দিকে না তাকিয়ে অন্যের কাছে কি আছে সেটা সবসময় দেখি। একজন মানুষের ভালো থাকাটা সম্পূর্ণ তার নিজের ওপর নির্ভর করে যে সে কোনটাকে গুরুত্ব দেবে; যা তার কাছে আছে না কি যা তার কাছে নেই। কারণ যা নেই যদি সেটার পেছনে মানুষ ছুটতে শুরু করে তবে কোনদিনই ভালো থাকতে পারবে না। কোথাও নিজের সীমাটাকে ঠিক করতে হবে এবং কিসে ভালো থাকবে সেটা ভালো করে বুঝতে হবে। আজকাল মানসিক স্বাস্থ্যের ভালো থাকা নিয়ে সবাই খুবই যত্নশীল, কারণ মানসিক স্বাস্থ্য এবং শারীরিক স্বাস্থ্য দুটোই পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। একটা ভালো থাকলে অন্যটা ঠিক থাকে; আবার একটা খারাপ হলে অন্যটার ওপরও প্রভাব পড়বে। আর এই দুই স্বাস্থ্য তখনই ভালো থাকবে যখন জীবনের অন্যান্য দিকগুলি ঠিকঠাক কাজ করবে। কিন্তু সব ঠিকঠাক কাজ করবে, সব জায়গায় সব ভালো হবে, এটা ভাবাটাও ঠিক হবে না। কিছু সমস্যা তো থাকেই এবং সেটা থাকাটাও খুব দরকার। সমস্যা থেকেই সৃজনশীলতার জন্ম হয়, সমাধানের পথ আবিষ্কৃত হয়। তাই কিছুটা সমস্যা মানসিক এবং শারীরিক উভয় স্বাস্থ্যের জন্যই জরুরী এবং উপকারী। প্রত্যেকে আমরা অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যাচ্ছি, কখনও নিজের সাথে কখনও অপরের সাথে। তাই যদি একে অপরের এই যুদ্ধটাকে বুঝে একে অপরের জন্য ভালো কিছু করি তাতেও আমরা ভালো থাকতে পারি। যত দিন যাচ্ছে মানুষ ক্রমশই নিজের বৃত্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। নিজেকে ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছে না। তাই জীবনে আনন্দ বা দুঃখ যাই আসুক না কেন সে কারও সাথে ভাগ করতে পারছে না। মানুষ যত নিজেদের মধ্যে সুখ দুঃখ একে অপরের সাথে ভাগ করবে, যত মনের কথা অন্যের সাথে বলবে তত সে কোনো কিছুর ভালো দিক বা সুযোগগুলো দেখতে শিখবে; তত সমস্যা সমাধানের দিকে সচেষ্ট হবে এবং আত্মকেন্দ্রিক না হয়ে আনন্দশীল হবে। সেদিন সবাই দৃঢ়তার সাথে বলতে পারবে .. “ভালো আছি, ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।”